যাহার উপর যাকাত ফরয: মুসলমান আজাদ, প্রাপ্ত বয়স্ক, বুদ্ধিমান ব্যক্তি, যাহার নিকট সারা বৎসরের সাংসারিক খরচাদি এবং দেনা-পাওনা বাদে নেসাব পরিমাণ মাল অতিরিক্ত থাকে তাহার উপর যাকাত ফরয। যাকাতের পরিমাণকে "নেছাব" বলে। সাংসারিক আবশ্যকীয় খরচ-পত্র এবং নিত্য প্রয়োজনীয় আসবাবপত্রাদি ব্যতীত যদি কাহারও নিকট সাড়ে বায়ান্ন তোলা রৌপ্য বা সাড়ে সাত তোলা স্বর্ণ থাকে অথবা ব্যবসার মাল মওজুদ থাকে এবং উহা এক বৎসর অতিবাহিত হয় তাহাকে ছাহেইবে নেছাব বলে। তাহাকে উহার ৪০ (চল্লিশ) ভাগের এক ভাগ মাল বা উহার মূল্য, (হিসাব করিলে শতকরা আড়াই টাকা হিসাবে) যাকাত স্বরূপ আদায় করিয়া দিতে হইবে। যদি স্বর্ণ রৌপ্য উভয়ই আছে, কিন্তু একটির নেসাব পূর্ণ হয় তবে অবশ্যই যাকাত আদায় করিতে হইবে। কারণ গরীবের হককে সকল সময় প্রাধান্য দিতে হইবে। উট ১টি, গুরু, মহিষ ৩০টি ও ছাগল, ভেড়া ৪০টি পর্যন্ত হইলেই যাকাতের পরিমাণ হয়। মনে রাখিতে হইবে যে প্রয়োজনের চেয়ে বেশি হইতে হইবে এবং কমপক্ষে ছয় মাস বনে জঙ্গলে মাঠে চরিয়া খায়, উহাদের যাকাত দিতে হইবে, নতুবা নহে।
যাকাত পাওয়ার অনুপযুক্ত লোক
১. নেছাব পরিমাণ যাহার কাছে মাল আছে। ২. পিতা, মাতা, পিতামহী যতদূর উপরে যায় এবং পুত্র, কন্যা, পৌত্র ও দৌহিত্র নিম্নে যতদূর তাহার আওলাদের ছিলছিলা চলিয়া গিয়াছে এদের কাহাকেও যাকাত দেওয়া জায়েয নাই। ৩. স্বামী, স্ত্রী একে অন্যকে। ৪. ধনী লোকদের ছেলেমেয়েদেরকে। ৫. বনী হামেশকে। ৬. বিধর্মীকে যাকাত দেওয়া জায়েয নাই। ৭. কাহারও নিকট থেকে লাভের প্রত্যাশায় যাকাত দেয়া জায়েয নাই। ৮. নিজের দাস-দাসীকে যাকাতে দেয়া জায়েয আছে, কিন্তু যাকাতের টাকা দিয়া তাহাদের বেতন দেয়া জায়েয নাই।
হজ্বের বিবরণ
আল্লাহ্ তা'আলা কোরআন মজীদে ঘোষণা করেছেন-
مِعُ الْبَيْتِ مَنِ اسْتَطَاعَ إِلَيْهِ سَبِيلاً -
উচ্চারণঃ ওয়ালিল্লাহি আলান্নাসি হিজ্ব বাইতি মিনাস তা'তায়া ইলাইহি সাবিলা।
অনুবাদ: যাহাদের (ধন সম্পদের সামর্থ) হজ্বে যাইবার ক্ষমতা আছে আল্লাহ তা'আলার সন্তুষ্টির উদ্দেশ্যে হজ্ব করা তাহাদের উপর ফরয।
হজ্ব ইসলামের পঞ্চম রোকন। সারা বৎসরের সংসারের সমুদয় খরচ মিটাইয়া যদি মাশরীফ যাওয়ার মত খরচের টাকা জমা থাকে তবে তাহার উপর হজ্ব করা ফরয। জ. একবারই হজ্ব ফরয হয়। কিন্তু ইচ্ছা করিলে অনেক বার নফল হজ্ব করিতে পারে যদি সামর্থ থাকে।
জিলহজ্ব মাসের ৯ তারিখে কত গুলো নির্দিষ্ট নিয়মে বায়তুল্লাহ শরীফ তাওয়াফ করাকে হজ্ব বলে। যখন যাহার উপর হজ্ব ফরয হয় তখনই হজ্ব করা কর্তব্য। নতুবা পরে আর্থিক অবস্থা খারাপ হইবার জন্য হজ্ব করিতে না পারলে গোনাহ হইবে।
হযরত মুহাম্মদ (সাঃ) বলেছেন, হজ্বের উপযুক্ত হইয়া যদি কেহ হজ্ব না করিয়া মারা যায় সে যেন ইহুদী নাছারার ন্যায় মৃত্যু মুখে পতিত হইল।
যাহার উপর সংসারের সময় সাহিত্ব তাহার পক্ষে হয় হইতে ফিরিয়া আসার সায় পর্যন্ত পরিবারের ভরণ-পোশ ও মন্ত্র্য পরীয় পর্যন্ত যাতায়াতের খরচে থাকিলেই তাহাকে হড় করিতে হইবে। পিতামাতা জীবিত থাকিতে তাহাদের অনুমতি বাতীত হজ্বে যাওয়া জায়েয নাই।।
স্ত্রীলোকের উপর হড় ফরয হইলে স্বামী অথবা মাহরুম ব্যাক্তি যাহাদের সঙ্গে বিবাহ জায়েয নাই সে সময় পুরুগার সংগে হচ্ছে যাইতে এইবে। শরিয়তে নিষিদ্ধ এরশ ধার্মিক সুফি মুন্নাতী বাড়ির সরিতও হচ্ছে যাওয়া জায়েয নাই। এমন কি এয়াতী যাওয়াও স্ত্রীলোকের পক্ষে জায়েয নাই।
হজের শেষে অথবা হজ্বের পূর্বে মদীনা শরীয়ে যাইয়া নবী পাক (সাঃ)-এর রওজা মুবারক জিয়ারত করা অবশ্য কর্তব্য। নবী করীম (সাঃ) বলেছেন, যে ব্যক্তি আমার রওজা জিয়ারত করিবে তাহাতে সাফায়াত করা আমার জন্য কারাজিব। তিনি আরও বলেছেন, হজ্ব করিয়া যে আমার রওজা জিয়ারত করিল সে যেন আমাকে জীবিত দর্শন করিল।
মহিলাদের হজ্বের নিয়ম
১. বোরখা পড়িয়া হজ্ব করা ২. তাকবীর বলার সময় চুপে চুপে বলা। ৩. দুই হাত বুলাইয়া তাওয়াফ না করা ৪. দুইটি জাজের মধ্যে না দৌড়ান ৫. মাথার চুল মুড়াইবে না কিন্তু কাটিয়া ছোট করিবে। ৬. সেলাই করা রেশম কাপড় ও গহণা পড়িয়া এহরাম বাঁধিতে পারিবে। ৭. হায়েজ ও নেফাছওয়ালী স্ত্রীলোক কাবার ঘর তাওয়াফ করিতে পারবে না। (হজ্বের অন্যান্য কাজকর্ম করিতে পারবে।) ৮. জনতাহার ভীড়ের মধ্যে হাজরে আসওয়াস হ্রস্বন করিবে না। ও দ্বাফা মারওয়ায় দৌড়াবেনা। মানুষের ভীড় না থাকিলে দৌড়াতে পারে। ৯. স্ত্রীলোকের সঙ্গে এমন লোক থাকতে ছুটবে যাহার সহিত বিবাহ হারাম। ১০. স্ত্রীলোকের স্বামী মারা গেলে বা তালাক দিলে ইদ্দত শেষ না হওয়া পর্যন্ত হজ্বে যাওয়া ফরয নহে।
হজ্বের আরকান
হজ্বের আরকান পাঁচটি : ১. এহরাম বাঁধা। ২. কাবা শরীফ তাওয়াফ করা ৩. সাফা ও মারওয়া পাহাড়ের মধ্যে দৌড়ান। ৪. নির্দিষ্ট সময়ে আরাফাতের ময়দানে দাড়ান। ৫. মাথার সমস্ত চুল মুড়াইয়া ফেলা।
হজ্ব ফরয হবার শর্তাবলী
১. মুললমান ২. প্রাপ্ত বয়স্ক ৩. স্বাধীন ৪. সজ্ঞান ৫. সৃষ্টিশক্তি সম্পন্ন ৬. হজ্বের মৌসুমে হজ্ব করার মত সঙ্গতি থাকা অর্থাৎ যাতায়াত ও খাওয়া খরচ চলে এবং ফিরে আসা পর্যন্ত পরিবারের লোকজনের আহারাদির ব্যবস্থা হয়। উপরোল্লিখিত শর্ত পাওয়া গেলে জীবনে একবার হজ্ব করা ফরয। যে বৎসর হজ্ব ফরয হয় সে বৎসর হজ্ব করা উচিত। পরে গরীব হয়ে গেলে গুনাহগার হয়ে থাকবে। সুদ, ঘুষের টাকা দিয়ো হজ্বে যাওয়া নাজায়েয। ভিক্ষা করে হজে যাওয়া উচিত নয়। স্ত্রীলোক হজ্বে গমন করলে স্বামী, পিতা, ছেলে ইত্যাদি মাহরাম ব্যক্তির সঙ্গে যেতে পারে, অন্যথায় হজ্ব আদায় করা ফরয নয়।
হজ্বের ফরয ও ওয়াজিব
হজ্বের মধ্যে তিনটি ফরযঃ ১. এহরাম বাঁধা ২. আরাফাতের ময়দানে যাওয়া এবং সেখানে অবস্থান করা। ৩. কাবা গৃহের তাওয়াফে জিয়ারত করা। এদের মধ্যে কোন একটি ব্যতীত হজ্ব আদায় হইবে না।
হজ্বের মধ্যে এগারটি ওয়াজিব: ১. সাফা ও মারওয়া নামাক দুই পাহাড়ের মাঝখানে দাঁড়ান ২. আরাফাতের ময়দান হইতে মিনা যাইবার সময় 'মুজদালিফায়" রাত্রি যাপন করা ৩. মিনাতে কঙ্কর নিক্ষেপ করা। ৪. বিদেশী হাজীদের বিদায়ী তওয়াফ করা। ৫. মাথার চুল মুড়াইয়া ফেলা। ৬. আরাফাতে অবস্থানকালে স্ত্রী সহবাস না করা। ৭. ডান দিক হইতে কাবা শরীফ তাওয়াফ করা। ৮. সূর্যাস্ত পর্যন্ত আরাফাত ময়দানে অবস্থান করা ৯. নিজে হাঁটিয়া তাওয়াফ করা। ১০. মীকাত হইতে এহরাম করা।
হজ্বের সুন্নত ছয়টি
১. কাবা শরীফ পৌছিয়াই তাওয়াফ করা, ২. ছতর ঢাকিয়া কাবা শরীফ তাওয়াফ করা ও আরাফাতের ময়দানে ইমামের পশ্চাতে পশ্চাতে যাওয়া। ৪. সাফা ও মারওয়া পাহাড়ের মধ্যে সাতবার দৌড়ান ৫. মিনায় রাত্রি যাপন করা ৬. কঙ্কর নিক্ষেপ করা।
হজ্বে গমনের পূর্বে প্রয়োজনীয় কাজ
১. মাতা পিতা আত্মীয়স্বজনদের নিকট অপরাধের জন্য ক্ষমা চাওয়া ও বিদায় নেয়া।
২. নিজের বিগত জীবনের সমস্ত পাপের কথা স্মরণ করিয়া আল্লাহ তা'আলার নিকট
ক্ষমা চাওয়া ও তওবা করা। ৩. শত্রু-মিত্র সবার নিকট নিজের অন্যায় কাজের জন্য ক্ষমা চাওয়া ও বিদায় নেয়া।
৪. কাহারো নিকট কোন দেনা থাকিলে তাহা পরিশোধ করা। স্ত্রীর মোহরানার টাকা পরিশোধ অথবা ক্ষমা চাহিয়া নেয়া। পাওনাদারের মৃত্যু হইয়া থাকিলে তাহার ওয়ারিশদেরকে পাওনা টাকা পরিশোধ করা। যদি কোন ওয়ারিশ না থাকে তবে তাহার
নামে প্রাপ্য টাকা হিসাব করিয়া দান করিয়া দেয়া। ৫. কাহারও কোনকিছু আমানত থাকিলে তাহা মালিককে ফিরাইয়া দেয়া।
৬. ক্রোধ, লোভ, হিংসা, অহংকার মন হইতে দূর করিয়া শান্ত ও পরহেজগারী ভাব অবলম্বন করা।
৭. কাহারও উপর কোন অন্যায়-অত্যাচার করিয়া থাকিলে তাহার নিকট হইতে ক্ষমা চাহিয়া লওয়া। সে যদি মরিয়া যায় তবে উক্ত অপরাধের জন্য আল্লাহ্ তা'আলার নিকট তওবা করা এবং ক্ষমা চাওয়া।
কোরবানী
কোরবানী অতিশয় পুণ্যের কাজ। হাদীসে আছে, কোরবানীর পশুর রক্ত মাটিতে পড়ার পূর্বেই আল্লাহ তা'আলা কবুল করেন। কোরবানী করা ওয়াজিব। জিলহজ্ব মাসের ১০ তারিখ নামাজের পরই কোরবানী করিবে। সেইদিন কোরবানী করিতে না পারিলে ১১ এবং ১২ তারিখেও কোরবানী করা জায়েয আছে।
যাহাদের উপর কোরবানী ওয়াজিব
যাহাদের উপর যাকাত ওয়াজিব, তাহাদের উপর কোরবানীও ওয়াজিব। কিন্তু যাহাদের উপর কোরবানী ওয়াজিব নহে, সে যদি কোরবানীর নিয়ত করিয়া কোরবানীর পশু খরিদ করে, তাহার উপর কোরবানী ওয়াজিব হইয়া যায়।
কোরবানীর পশু
গরু, মহিষ এবং উট দ্বারা সাতজনের নামে একত্রে কোরবানী দিতে পারে, কিন্তু ছাগল, দুম্বা, ভেড়া একজনের বেশীর নামে দিতে পারিবে না। কোরবানীর পশু নিখুঁত, পুষ্ট হওয়া উচিৎ। কৃশ, অন্ধ, খোঁড়া কিংবা লেজ, শিং, বা কান বা কাটা পশু দ্বারা কোরবানী জায়েয নাই।
কোরবানীর পশুর বয়স উট হইলে ৫ বৎসর। গরু, মহিষ ২ বৎসর এবং ছাগল, ভেড়া, দুম্বা হইলে ১বৎসর হওয়া দরকার। মৃত ব্যক্তির নামে কোরবানী ওয়াজিব নহে, দিলে নফল হইবে। কোরবানীর গোশত, গরীব মিসকিন আত্মীয়-স্বজনকে দিবে এবং নিজেও রাখিবে। গরীব মিসকিনকে কোরবানীর চামড়া বিক্রির অর্থ দিয়া দিবে, ইচ্ছা করিলে পাকা করিয়া নিজেও রাখিতে পারে। কোরবানীর গোশত সমান তিন ভাগ করে এক ভাগ আত্মীয়-স্বজন, এক ভাগ গরীব মিশকিনকে এবং একভাগ নিজে রাখিবে। কিন্তু কারও যদি কোরবানীর সম্পূর্ণ গোশত প্রয়োজন হয় ইচ্ছা করিলে সম্পূর্ণই রাখতে পারে। আর যদি চার ভাগ করে এক ভাগ গরীব মিসকিনকে দেয় তাহাও দিতে পারে।
কোরবানীর পশু জবেহ করার নিয়ম
কোরবানীর পশু কোরবানী দাতা নিজেও জবেহ করিতে পারে অথবা অন্যের দ্বারাও করাইতে পারে। পশুটিকে কেবলামুখী শোয়াইয়া নিম্নলিখিত দোয়া পড়িয়া তাহারপর ধার- াল অস্ত্র দ্বারা জবেহ করিবে।
কোরবানীর দোয়া
إِنِّي وَتَجَهْتُ وَجْهِيَ الَّذِي فَطَرَ السَّمَوتِ وَالْأَرْضُ حَنِيفًا وَمَا أَنَا مِنَ الْمُشْرِكِينَ - إِنَّ صَلوتِي وَنُسُكِي وَمَجَايَ وَمَمَاتِي اللَّهِ رَاتِ الْعَالَمِينَ - لَا شَرِيكَ لَهُ وَبِذَالِكَ أُمِرْتُ وَأَنَا مِنَ
بسم الله الله اكبر - اللهم مِنكَ وَلكَ :
- 1 الْمُسْلِمِينَ
উচ্চারণ: ইন্নি ওয়াজ্জাহতু ওয়াজহিয়া লিল্লাযী ফাতাহারাস্ সামাওয়াতি ওয়াল আরদা হানীফাও ওয়ামা আনা মিনাল মুশরিকীন। ইন্না-ছালাতী ওয়া নুসুকী ওয়া মাইয়্যায়া ওয়া মা- মাতী লিল্লাহি রাব্বিল আ'লামীন। লা শারীকা লাহু ওয়া বিজালিকা উমিরতু ওয়া আনা মিনাল মুসলিমীন। আল্লাহুম্মা মিল্কা ওয়া লাকা, বিসমিল্লাহি আল্লাহু আকবার। উপরে উল্লেখিত দোয়া পড়িয়া জবেহ্ করিয়া নিম্নলিখিত দোয়া পড়িবে।
اللَّهُمَّ تَقَبَّلُ مِن فُلَانَ مِن فَلَانٍ كَمَا تَقَبَّلْ مِنْ حَبِيبِكَ مُحَمَّدٍ وَخَلِيلِكَ إِبْرَاهِيمَ عَلَيْهِمَا الصَّلُوةُ وَالسَّلَامُ -
উচ্চারণ : আল্লাহুম্মা তাকাব্বাল মিন্নি কামা তাকাব্বাল মান হাবীবিকা মুহাম্মাদিন হাবীবিকা খালীলিকা ইব্রাহীমা, ওয়া আলাইহিমাছ ছালাতু ওয়াছ সালাম।
কোরবানীর পশু নিজে জবেহ করা উত্তম, অন্যে করিলে কোরবানীর স্থানে যাহার কোরবানী তাহার নাম ও পিতাহার নাম উল্লেখ করিতে হয়।
ইসলামে তালাক প্রথা
আল্লাহ্ তা'আলা তালাককে শরীয়ত সম্মত করেছেন। কারণ পারিবারিক জীবনে তালাকের প্রয়োজন দেখা দিতে পারে। তবে বিনা প্রয়োজনে, স্ত্রীর কোন গুরুতর দোষত্রুটি ভাড়া তালাক দেওয়া মারাত্মক অপরাধ। এ সম্পর্কে ইসলামের মনীষীগণ একমত। ইসলামের ঘোষিত নীতি হইলো, না নিজে ক্ষতি স্বীকার করিবে, না অন্যকে ক্ষতিগ্রস্ত করিবে। অথচ অকারণে স্ত্রীকে তালাকের কারণে অপূরণীয় ক্ষতি ও অপমান-লাঞ্ছনার সম্মুখীন হইতে হয়। প্রখ্যাত ফিকাহবিদ ইবনে অবেদীন বলেছেন, তালাক মূলত নিষিদ্ধ। মানে হারাম; কিন্তু দাম্পত্য জীবনের সম্পর্ক যখন এতদূর বিষজর্জর হয়ে পড়ে যে, তা থেকে নিষ্কৃতি লাভ অপরিহার্য হয়ে পড়ে, তখন তা অবশ্যই জায়েয। বিনা কারণে যদি তালাক দেয়া হয়; স্ত্রীকে, তাহার পরিবার-পরিজনকে, সন্তান-সন্তুতিকে ও পিতামাতাকে কঠিন শাস্তি ও বিপদে ফেলা উদ্দেশ্য হয়, তাহলে এ তালাক একবারেই নিষিদ্ধ। আল্লাহ্ তা'আলা কোরআনে বলেছেন।
فَإِنْ خِفْتُمْ أَطَعْنَكُمْ فَلَا تَبْغُوا عَلَيْهِ سَبِيلًا *
উচ্চারণ: ফাইন লিখাতুম আত্বা'নাকুম ফালা তাবগু আলাইহিন্না সাবিলা
অনুবাদঃ স্ত্রীরা যদি স্বামীদের কথামত কাজ করিতে শুরু করে, তাহলে তখন আর তাহাদের উপর কোন জুলুমের বাহানা তালাশ করো না তালাক দিও না।
হযরত মুহাম্মদ (সাঃ) বলেছেন, তোমাদের এক একজনের অবস্থা কি হইয়াছে? তাহারা কি আল্লাহর বিধান নিয়ে তামাশা খেলছে। একবার বলে তালাক দিয়েছি, আবার বুলে, পুনরায় গ্রহণ করেছি।
হযরত মুহাম্মদ (সাঃ)-এর এই হাদীস থেকে বোঝা যায় তালাক কোন সাধারণ জিনিস নয়। মুখে এল, আর অমনি তালাকের শব্দ উচ্চারণ করে ফেললাম, তা এমন সহজ ও হালকা বস্তু নয়। বরং এ হচ্ছে অতি সংঘাতিক কাজ।
হযরত মুহাম্মদ (সাঃ) বলেছেন, তালাক অপেক্ষা অধিকতর ঘৃণার জিনিস আর একটিও আল্লাহ তা'আলা সৃষ্টি করেননি।
হযরত আলী (রাঃ) হইতে বর্ণিত, হযরত মুহাম্মদ (সাঃ) নিজের বাণী থেকেও তাল- াকের ভয়াবহতা ও ভয়ংকরতা স্পষ্ট বুঝা যায়।
তিনি বলেছেন, তোমরা বিয়ে কর, কিন্তু তালাক দিও না, কেননা, তালাক দিলে তাহার দরুন আল্লাহ্ তা'আলার আরশ কেঁপে উঠে।
স্বামী-স্ত্রীর বিরোধ মিমাংসার ব্যবস্থা
ইসলাম প্রথমে দাম্পত্য জীবনের সম্ভাব্য সকল প্রকার বিরোধ ও মনোমালিন্য শান্তিপূর্ণভাবে দূরকরণের ব্যবস্থা গ্রহণ করেছে।
১. স্বামী-স্ত্রী উভয়ক্তকই উভয়ের অধিকার ও উভয়ের প্রতি কর্তব্য সম্পর্কে সচেতন, দায়িত্ব ও কর্তব্যবোধ সম্পন্ন হইতে নির্দেশ দিয়েছে। হযরত মুহাম্মদ (সাঃ) বলেছেন, হুশিয়ার, তোমাদের প্রত্যেকেই দায়িত্বশীল এবং প্রত্যেকেই তাহার দায়িত্ব সম্পর্কে জিজ্ঞাসিত হইবে।
পুরুষ দায়ী তাহার পরিবারের জন্য, আর সেজন্যে সে আল্লাহ তা'আলার নিকট জবাবদিহি করিতে বাধ্য। স্ত্রী দায়ী তাহার স্বামীর ঘরবাড়ী ও যাবতীয় আসবাবপত্রের জন্যে এবং সে তাহার দায়িত্ব সম্পর্কে জিজ্ঞাসিত হইবে।
২. দাম্পত্য জীবনে স্বামী-স্ত্রীতে যখনই কোন প্রকার বিবাদ, মনোমালিন্য দেখা দিবে তখনই তাহাদের উভয়ের জন্যে এই নসীহত রয়েছে যে, প্রত্যেকেই যেন অপরের ব্যাপারে নিজের মধ্যে সহ্য শক্তির সংবৃদ্ধি রক্ষা করে, অপরের কোন কিছু অপছন্দ হলে সে যেন দাম্পত্য জীবনের মাধুর্য রক্ষার উদ্দেশ্যে তা অকপটে বরদাস্ত করে। কেননা একথা সর্বজনবিদিত যে, পুরুষ ও স্ত্রী স্বভাব, প্রকৃতি, মন-মেজাজ ও আলাপ ব্যবহার ইত্যাদির দিক দিয়ে পুরামাত্রায় সমান হইতে পারে না। কাজেই অপরের অসহনীয় ব্যাপার সহ্য করে নেয়ার জন্য নিজের মধ্যে যোগ্যতা অর্জন করা কর্তব্য। ৩. দাম্পত্য
জীবন সংরক্ষণের এ ব্যবস্থা যদি ব্যর্থ হয়ে যায়, বিরোধ, বিরাগ বিরাগ ও মনে- ামালিন্যের মাত্রা যদি বৃদ্ধি পেতেই থাকে, তাহলে এ ব্যাপারে চূড়ান্ত মিমাংসার জন্যে উভয়ের নিকটাত্মীয়দের সাগ্রহে এগিয়ে আসা কর্তব্য। স্ত্রীর পক্ষ থেকে একজন এবং স্বামীর পক্ষ থেকে একজন পরস্পরের মধ্যে মিলমিশ বিধানের জন্যে ঐকান্তিক নিষ্ঠাপূর্ণ মনোভাব নিয়ে চেষ্টা চালাবে। এ যেন পারিবারিক বিরোধ মীমাংসার আদালত এবং এ আদালতের বিচারপতি হচ্ছে এ দু'জন। তাহারা উভয়ের মনোমালিন্যের বিষয় ও তাহার মূলীভূত কারণ সতর্কতাহার সঙ্গে অনুসন্ধান করিবে। বস্তুত; স্বামী-স্ত্রী যদি বাস্তবিকই মি-ে লমিশে একত্র জীবন যাপনে ইচ্ছুক এবং সচেষ্ট হয় তাহলে সাময়িক ছোটখাট বিবাদ নিজেরাই মীমাংসা করে নিতে পারে। আর বড় কোন ব্যাপার হলে তা এ পারিবারিক সালিসী-আদালত দ্বারা মীমাংসা করিয়ে নেয়া খুবই সহজ। কোরআন পাকে আল্লাহ বলেছেন,
وَإِنْ خِفْتُمْ شِفَاقَ بَيْنِهِمَا فَانْعُوا حَكَمًا مِّنْ أَهْلُهُ وَحُكَنَا من أهلها إن يُرِينَا إِصْلَاحًا يُوقِقِ اللَّهُ بَيْنَهُمَا
উচ্চারণঃ ওয়াইন খিফতুম শিকাকা বাইনিহিমা ফাব আছু হাকামাম মিন আহলিহ ওয়া হাকামাম মিন আহলিহা ইন ইউরিদা ইছলাহান ইয়াওয়াফফিকুল্লাহু বাইনাহুমা।
অনুবাদঃ যদি তোমরা স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে কোন বিবোধ মনোমালিন্য সৃষ্টি হইয়াছে বলে ভয় কর, তাহলে তোমরা স্বামীর পরিবার থেকে একজন বিচারক এবং স্ত্রীর পরিবার থেকে একজন বিচারক পাঠাও। তাহারা দুজনে যদি বাস্তবিকই অবস্থার সংশোধন করিতে চায়, তাহলে আল্লাহ্ তা'আলা তাহাদের সে জন্যে তাওফীক দান করিবেন। বাইরের অনাত্মীয় লোক বিচার ফয়সালার জন্য বসলে কোন এক পক্ষের দিকে ঝুঁকে
পড়ার সম্ভাবনা থাকতে পারে। কিন্তু উভয়ের আত্মীয় যদি মীমাংসার ভার গ্রহণ করে এবং প্রত্যেকেই নিজ নিজ পক্ষে কথা বলে, তাহলে এধরনের কোন ধারণার অবকাশ থাকে না। এ জন্যেই আত্মীয় ও আপন লোককে এই বিরোধ মিমাংসার ভার দিতে বলা হইয়াছে। এক দম্পতি হযরত আলী (রাঃ)-এর কাছে অনেক লোকজন নিয়ে/উপস্থিত হয়। তিনি জিজ্ঞেস করিলেন ব্যাপার কি? তাহারা বললেন, এই স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে বিরোধ সৃষ্টি হইয়াছে তাহার মীমাংসা চাই। তখন হযরত আলী (রাঃ) বললেন, উভয়ের আপন আত্মীয় হইতে এক একজনকে এই বিরোধ মিমাংসায় নিযুক্ত করে দাও। যখন দুজন লোককে নিযুক্ত করা হইলো তখন হযরত আলী (রাঃ) বললেন, তোমাদের দায়িত্ব ও ক্ষমতা কতখানি তা জান? তাহার পরে তিনি বললেন, তোমাদের দায়িত্ব হল, তাহারা দুজনে মিলেমিশে একত্রে স্বামী-স্ত্রী হিসেবে থাকতে চাইলে তাহার ব্যবস্থা করে দিবে। আর যদি মনে কর যে, তাহারা উভয়েই বিচ্ছিন্ন হইতে চায়, তাহলে পরস্পরকে শান্তিপূর্ণভাবে ও নিয়মতান্ত্রিকভাবে বিচ্ছিন্ন করে দিবে।
বিচারকদ্বয় সব কথা শুনে, সব অবস্থা জেনে বুঝে একটি চূড়ান্ত ফয়সালা করে দিবে ও উভয়কে তা মানার জন্য বাধ্য অরিবে। কিন্তু যদি তাহারা উভয়ে অথবা একজন মানতে রাজি না হয় তাহলে তাকে ফয়সালা মেনে নেয়ার নির্দেশ দিতে হইবে। এ নির্দেশ মেনে নিতে উভয়ে বাধ্য। এ ধরনের সমস্ত চেষ্টা চালানোর পারও যদি মিলেমিশে স্বামী-স্ত্রী হিসাবে থাকার কোন উপায় না বেচো, বরং উভয় পক্ষই চূড়ান্ত বিচ্ছেদ ঘটানোর জন্যে অনমনীয় হয়ে দাঁড়ায়। তাহলে ইসলাম তাহাদের দাম্পত্য জীবনের চূড়ান্ত অবসান ঘটাবার অবকাশ দিয়েছে। যার পরিণাম হইলো তালাক।
ইসলামে তালাক দানের একটা নিয়ম দেয়া হইয়াছে, এবং তা হচ্ছে এই যে, স্বামী-স্ত্রীর 'ভূহর' (হায়েয না থাকা) অবস্থায় একবার এক তালাক দিবে। এই তালাক পাওয়ার পর স্ত্রী স্বামীর ঘরেই ইদ্দত পালন করিবে। কিন্তু স্বামী-স্ত্রীর সংগে স্বামী-স্ত্রী সম্পর্ক থাকছে না। এমন তালাক দান ও ইদ্দত পালনের নিয়ম করার কারণ হলঃ এতে করে উভয়েরই হায়ুমণ্ডলীর সুষ্ঠু এবং তাহাদের অধিক সুবিবেচক হয়ে ওঠার সুযোগ পায়। চূড়ান্ত বিচ্ছেদের সে কি মারাত্মক পরিনাম তা জাহারা মর্মে মর্মে অনুভব করিতে পারবে। তাহারা পরিষ্কার বুঝতে সক্ষম হইবে যে, তালাকের পর তাহাদের সন্তান, ঘর- সংসারের কি মারাত্মক দুর্দশা হইতে পারে। ফলে তাহারা উভয়েই অথবা যে পক্ষ তালাকের জন্য বেশি পীড়াপীড়ি করেছে, ঝগড়া-বিবাদ ও বিরোধ-মনোমালিন্য সম্পূর্ণ পরিহার করে আবার নতুনভাবে মিলিত জীবনযাপন করিতে রাজি হইতে পারে। এ সাময়িক বিচ্ছেদ তাহাদের মধ্যে প্রেমভালবাসার তীব্র আকর্ষণ জাগিয়ে তুলতে পারে। এই অবস্থা হলে একে এক ভালাক বা তালাকে রজয়ী বা ফিরিয়ে পাওয়ার অবকাশপূর্ণ তালাক বলে। তিন মাস ইদ্দত শেষ হইবার আগেই উভয়ের পুনর্মিলন হইতে হইবে। এতে নতুন করে বিয়ে পড়াতে হইবে না।
৪. কিন্তু যদি এভাবে তালাক দেওয়ার পর তিন মাসের মধ্যে স্ত্রীকে ফিরিয়ে নেওয়া না হয় তাহলে এ তালাক বায়েন ভাষাক হয়ে যাবে। তখন যদি ফিরিয়ে নিতে হয় তাহলে পুনরায় বিয়ে পড়াতে হইবে ও নতুন করে দেনমোহর ধার্য করিতে হইবে, এমতাবস্থায় স্ত্রী স্বাধীনংসে ইচ্ছা করিলে প্রথম স্বামীকে পুনরায় গ্রহণ করিতেও পারে, আর ইচ্ছা হলে অপর কাউকে স্বামী হিসেবে গ্রহণ করিতে পারে। প্রথম স্বামী এই স্ত্রীকে ফিরিয়ে নেয়ার জন্য জবরদস্তি করিতে পারবে না এবং তাহার জন্য স্বামী গ্রহণের পথে বাঁধা দিতে পারবে না।
১২৮ ৫. এক তালাকের পর ইদ্দতের মধ্যেই স্ত্রীকে যদি ফিরিয়ে নেওয়া হয়, আর স্বামী-স্ত্রী হিসেবে জীবনযাপন শুরু করার পর আবার যদি বিরোধ দেখা দেয় তাহলে প্রথমবারের ন্যায় আবার পারিবারিক আদালতের সাহায্যে মীমাংসার জন্য চেষ্টা করিতে হইবে। এবারও যদি মীমাংসা না হয় তাহলে স্বামী তখন আর এক তালাক প্রয়োগ করিবে। তখনই প্রথম তালাকের নিয়ম অনুযায়ী কাজ হইবে।
৬. দ্বিতীয়বার তালাক দেয়ার পর যদি স্বামী তাহার স্ত্রীকে ফিরিয়ে নেয় তাহারপর বিরোধ দেখা দেয়, তখনও প্রথম দুবারের মত মীমাংসার চেষ্টা করিতে হইবে। আর তা কার্যকর না হলে স্বামী তৃতীয় বার তালাক দিবে। আর এই হইলো তালাক দানের ব্যাপারে চূড়ান্ত ও সর্বশেষ ক্ষমতা। তাহারপর স্ত্রী তাহার জন্যে হারাম এবং সেও স্ত্রীর জন্যে হারাম হয়ে যাবে। কোরআনে আল্লাহ তা'আলা বলেছেন,
اطلاق مُرْنَانِ فَامِنَاكَ بِمَعْرُوفٍ أَوْ تَشْرِيعُ بِإِحْسَانِ * আতালাকু মাররাতানি 'কফিন আওভাসরীহুম বিইহসানি।
উচ্চারণঃ ফাইম ছাকুম বিমা অনুবাদঃ তালাক দুবার দেয়া যায়, তাহারপরে হয় ভালভাবে স্ত্রীকে গ্রহণ করা হইবে, না হয় ভালভাবে সকল কল্যাণ সহকারে তাকে বিদায় দেয়া হইবে।
এই বিদায় দেয়া হইবে থেকেই ততীয় তালাক বোঝা যায়। তা মুখের স্পষ্ট উচ্চারণের দ্বারাই হোক, কি এমনি রেখে দিয়ে তুহরকাল অতিবাহিত করিয়াই দেয়া হোক উভয়ের পরিণতি একই।
তিন তালাকের পরিণতি
এক, দুই, তিন তালাক হয়ে গেলে স্বামী-স্ত্রী পরস্পরের জন্য চিরতরে হারাম হয়ে যায়। তাহারপর এ দুয়ের পুনরায় স্বামী-স্ত্রী হিসেবে মিলিত হইবার কোন অবকাশ নাই। তখন এমন অবস্থা দাঁড়ায় যে, স্বামী সেই স্ত্রীর স্বামী নয় এবং স্ত্রী সেই স্বামীর স্ত্রী নয়। যারা ছিল পরস্পরের জন্য সম্পূর্ণ হালাল, তালাক সংঘটিত হইবার পর তাহারাই পরস্পর
পরস্পরের জন্য হারাম হয়ে গেল। কোরআনে আল্লাহ্ তা'আলা বলেছেন, فإن طلاقَهَا فَلَا تَحِلُّ لَهُ مِنْ بَعْدِ *
উচ্চারণঃ ফাইন ত্বাল্লাকাহা ফালা তাজীলু লাহু মিম বা'দি।
অনুবাদ: স্বামী যদি স্ত্রীকে তৃতীয় তালাকও দিয়ে দেয়, তাহলে অতঃপর সেই স্ত্রী তাহার জন্য হালাল হইবে না। (সূরা বাকারা আয়াত-২৩০)
তৃতীয়বার তালাক দেয়ার মধ্যে স্বামী-স্ত্রীর চূড়ান্ত বিচ্ছেদ হয়ে যায়। তাহারা উভয়ের জন্যে হারাম হয়ে যায়। এরূপ ঘটনার মূলে একটি বিশেষ মানষিক কারণ নিহিত আছে। এ তৃতীয়বার তালাকে যদি তালাক সংঘটিত না হত, যদি একজন অন্যজনের জন্যে হারাম হয়ে না যেত। তাহলে দুনিয়ার স্বামীরা স্ত্রীদের বৈবাহিক জীবন নিয়ে মারাত্মক ছিনিমিনি খেলার সুযোগ পেত। স্ত্রীকে স্ত্রী হিসেবে তাহার পাওনা অধিকার দিত না। অথচ সে তাহার কাছ থেকে মুক্তি লাভ করিতে পারলে অন্যত্র বিবাহিত হয়ে সুখী জীবন যাপনের সুযোগ লাভ করিতে পারত। সে কারণে ইসলামী শরীয়তে এই মুক্তির ব্যবস্থা করা হইয়াছে। ইসলামের ব্যবস্থা হইলো, তিনবার তালাক হয়ে যাবার পর স্বামী-স্ত্রী চিরদিনের জন্যে হারাম হয়ে গেল। কিন্তু উভয়ে যদি স্বামী-স্ত্রী হিসেবে একত্রিত হইতে চায় তা হলে ঐ স্ত্রীলোকটি অপর একজন স্বামী গ্রহণ করিবে এবং স্বাভাবিক নিয়মে ঘর সংসার করার পর সেই স্বামী যদি তাকে মুক্তি দেয় তবে দুজনে আবার বিবাহিত জীবনযাপন করিতে পারবে পুনরায় বিয়ের মাধ্যমে।
Post a Comment
0Comments