আযানের শেষে দোয়া পাঠ করা সুন্নত

Siyam Hasan
By -
0

আযানের শেষে দোয়া পাঠ করা সুন্নত


اللهم رب هذه الدعوة التامة والصلواة القاني ات مُحَمَّدَنِ الوسيلة والفضيلة وابل مَقَامًا مُحْمُودَنِ الَّذِي وَعَدْتُ إِنَّكَ لَا تُخْلِفُ الْمِيْعَةِ

উচ্চারণ : আল্লাহুম্মা রাব্বা হাজিহিদ দা'ওয়াতিত্তাম্মাহ। ওয়াচ্ছালাতিল কৃষিমাহ, আতি মুহাম্মাদানিল ওয়াছিলাতা ওয়াল ফাদীলাহ্ ওয়াব আছহু মাকামাম মাহমুদানিল্লাজী ওয়া আল্লাহ্, ইন্নাকা লাতুখলিফুল মীয়াদ।
অর্থঃ হে আল্লাহ! এই পরিপূর্ণ আহ্বান অনুষ্ঠিতব্য নামাজের তুমিই এডু। মুহাম্মাদ (স) কে দান কর তুমি ওয়াসীলাহ ও শ্রেষ্টত্ব, এবং তাঁকে অধিষ্ঠিত কর বেহেশতের প্রশংশিত স্থানে। যার অঙ্গিকার তুমি করেছ। নিশ্চয় তুমি ভঙ্গ করনা অঙ্গিকার।


আযান ও ইকামত সম্পর্কীয় কয়েকটি জরুরী কথা


নামাজের সময় শুরু হওয়ার আগেই আযান দিলে তা শুদ্ধ হবে না। রং আযান পুনরায় দিতে হবে। রাসূল (স) বর্ণিত ও সাহাবায়ে কেরাম প্রদর্শিত পন্থা ও তরীকায় আজান দিতে হবে। অন্য কোন ভাষায় বা পদ্ধতিতে মযান দিলে আযান শুদ্ধ হবে না। প্রতি ওয়াক্ত নামাজের জন্য একবার আযান দিতে হয় এবং এটা সুন্নাতে মুয়াক্কাদাহ্। এছাড়া নফল নামাজ, ঈদের নামাজ, জানাযার নামাজের জন্য কোন আযান নেই।  জুমার নামাজের জন্য দু হাযান দিতে হয়। একবার মসজিদের বাইরে ওয়াক্ত শুরু হওয়ার সাথে যথে, আরেকবার মসজিদের ভিতরে খুৎবা শুরু হওয়ার আগে।  জুমার নামাজের প্রথমে আযান হওয়ার সাথে সাথেই জুমার প্রস্তুতি নেওযা ওয়াজিব। এরপর দোকানপাট খোলা রাখা কিংবা বেচাকেনা করা সম্পূর্ণ রূপে হারাম। হেঁটে হেঁটে কিংবা চলমান অবস্থায় আযান দেয়া মাকরূহ। আযানের শব্দগুলো জোরে ও ধীরে ধীরে বলতে হয় এবং ইকামতের শব্দগুলো আস্তে আস্তে ও তাড়াতাড়ি বলতে হয়। আর এ সুন্নাত এবং আযানে প্রতি দু তাকবীরের পর একটু সময় অপেক্ষা করা যাতে করে শ্রোতাবৃন্দ আযানের জওয়াব দিতে পারে, তা আবশ্যক। (হাইয়া আলাচ্ছালাহ) বলার সময় ডানদিকে মুখ ফিরান এবং (হাইয়া আলাল ফালাহ্) বলার সময় বাম দিকে মুখ ফিরান সুন্নত। তবে বুক ও পা যেন ঘুরে না যায় সেদিকে লক্ষ্য রাখতে হবে। কবলামুখী হয়ে আযান দেয়া সুন্নত। কিবলামুখী না হয়ে আযান দেয়া মাকরুহ। ইকামত মুসল্লিদের সাথে কাতারে দাঁড়িয়ে দিতে হয়। জানাবতের অবস্থায় গোছল করে আযান দেয়া মাকরূহে তাহরিমী। এ অবস্থায় আযান দিলে অবশ্যই তা পুনরায় দিতে হবে। অজু ছাড়া আযান দেওয়া উচিৎ নয়। তবে কেউ দিয়ে ফেললে তা দোহরাতে হবে না। জানাবুত কিংবা অজুহীন অবস্থায় ইকামত বলা মাকরূহে তাহরিমী।


মুয়াজ্জিনের ফযীলত


হাদীসে এসেছে- যে ব্যক্তি আযান দিবে আর আল্লাহর ভয় তার হৃদয়ে গ্রোথিত থাকবে। আল্লাহ তাআলা তার সমস্ত গোনাহ মাফ করে দিবেন এবং তাকে বেহেস্তে প্রবেশ করাবেন।

অন্য হাদীসে আছে যে, হাশরের ময়দানে মুয়াজ্জিনের মর্যাদা এত বেশী হবে যে, শত ভিড়ের মধ্যেও তার মাথা সবার উপরে থাকবে। যে অবস্থায় থাকলে আযানের উত্তর দিতে হয় নাঃ

৬টি অবস্থায় আযানের উত্তর দিতে হবে না। (১) হায়েজ নিফাসের অবস্থায়, (২) ইলমে দ্বীন শিক্ষা বা শেখানোর সময়। (৩) নামাজ অবস্থায়, (৪) স্ত্রী সম্ভোগের সময়, (৫) পেশাব-পায়খানার সময় (৬) খাওয়ার সময়।

নামাজের আওকাত


কুরআনে কারীমে ইরশাদ হয়েছেঃ-

وسبح بحمد ربك قبل طلوع الشمس وقبل

غروبها ومن اناء الليل فسبح واطراف النهار

لعلك ترضى . উচ্চারণ : ওসাবিহ্ বিহামদি রাব্বিকা ক্বাবলা তুলুয়িশ শাম্ম্সি ওয়া ক্বাবলা তুলুয়িশ্ শাম্ম্সি ওয়া ক্বাবলা গুরুবিহা ওয়ামিন আ-না ইল-লাইলী, ফাসাববিহউ ওয়া আত্মাফান্নাহারি লায়ল্লাকা তারদা।

অর্থঃ হে মুহাম্মাদ (স)! আপনি সূর্যোদয়ের পূর্বে এবং সূর্যাস্ত যাওয়ার

পূর্বে এবং রাতের সূচনা লগ্নে এবং আতরাফে নাহারে তাসবীহ্ পাঠ করুন। এ আয়াত দ্বারা পাঁচ ওয়াক্ত নামাজের সময়কে সংক্ষিপ্ত আকারে বর্ণনা করা হয়েছে। তাই আমরা এখন এর বিস্তারিত আলোচনা করছি।

ফজর নামাজের সময়


সুবহে সাদিকের পর থেকে সূর্য উদিত হওয়া পর্যন্ত এ সময়। এ সময়ের যে কোনখানে ফজর নামাজকে আদায় করা যাবে। এরপর আদায় করলে তা আদায়ে কামেল হবে না, বরং আদায়ে নাকেছ বা কাজা আদায় হবে। আমাদের বাংলাদেশের এর সময় হল জানুয়ারী মাসে ৫-১৪ মিনিট হতে ৬-৪১ মিনিট পর্যন্ত, এবং জুন মাসে ৩-৪২ মিঃ হতে ৫-১৪ মিনিট পর্যন্ত ফজরের নামাজের সময় থাকে, এবং ফজর নামাজ একটু আলোকিত হওয়ার পর আদায় করা মুস্তাহাব।

জোহর নামাজের সময়


ঠিক দ্বিপ্রহরের সময় সূর্য পশ্চিমাকাশে একটু হেলে যাওয়ার পর জোহরের সময় আরম্ভ হয় এবং প্রত্যেক বস্তুর ছায়া তার ছায়ায়ে আছলী ব্যতীত তার দ্বিগুণ হওয়া পর্যন্ত বাকী থাকে। ছায়ায়ে আছলী বলা হয় ঠিক দুপুরে সূর্য যখন মাথার উপর থাকে ঐ সময় প্রত্যেক বস্তুর ছায়া যে পরিমাণ থাকে তাকেই ছায়ায়ে আছলী বলা হয়। এ ছায়ায়ে আছলী বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন ধরনের হয়ে থাকে। যা নিকটবর্তী উলামায়ে কেরামের কাছ থেকে জেনে নিতে হবে। আমাদের বাংলাদেশে জানুয়ারী মাসে ১২-০৩ মিনিট হতে আরম্ভ হয়ে ৩-৩৭ মিনিট পর্যন্ত থাকে এবং জুন মাসে ১১-৫৭ মিনিট হতে ৪-৩৭ মিনিট পর্যন্ত থাকে। জোহরের নামাজ গরমের দিন একটু বিলম্ব করে এবং শীতকালে একটু তাড়াতাড়ি করে আদায় করা মুস্তাহাব।

আছর নামাজের সময়


জোহর নামাজের সময় শেষ হওয়ার সাথে সাথেই আরম্ভ হয় এবং সূর্যাস্তের পূর্ব পর্যন্ত বলবৎ থাকে এবং আছর নামাজ সূর্য হলুদ রং ধারণের পূর্বেই আদায় করা মুস্তাহাব। মাগরিব নামাজের সময়

সূর্যাস্তের সাথে সাথেই মাগরিবের নামাজের সময় আরম্ভ হয় এবং পশ্চিম আকাশে রক্তিম আভা বিদ্যমান থাকা পর্যন্ত মাগরিবের নামাজের সময় বাকী থাকে, এবং মাগরিবের নামাজ প্রথম ওয়াক্তে পড়া সুন্নত। আমাদের বাংলাদেশে জানুয়ারী মাসে মাগরিব নামাজের সময় ৫-৩০ মিনিটে আরম্ভ হয়ে ৬-৪৫ মিনিট পর্যন্ত থাকে, এবং জুন মাসে ৬-৪৫ মিনিটে আরম্ভ হয়ে ৮-০৫ মিনিট পর্যন্ত বাকী থাকে।

ইশার ওয়াক্ত


মাগরিবের নামাজের সময় শেষ হওয়ার সাথে সাথে ইশার নামাজের সময় আরম্ভ হয় এবং সুবহে সাদিকের পূর্ব পর্যন্ত মাকরূহের সাথে বাকী থাকে। তবে রাতের এক তৃতীয়াংশ পর্যন্ত অপেক্ষা করে নামাজ পড়া মুস্তাহাব। তবে রাত বারটার ভিতরে এই নামাজ পড়ে নেয়া উচিত।

বিতির নামাজের সময়


এটা ওয়াজিব নামাজ। এর জন্য কোন আলাদা নামাজের ওয়াক্ত নেই বরং ইশার নামাজ আদায় করার পর তার ওয়াক্ত হয় এবং সুবহে সাদিক পর্যন্ত বাকী থাকে। তবে এ নামাজ শেষরাতে পড়া উত্তম। যদি কার শেষরাতে ওঠার অভ্যাস থাকে এবং সে শেষ রাতে ওঠার প্রতি নিশ্চিত হয় তবে তার জন্য বিতির নামাজ শেষ রাতে পড়াই উত্তম। কেননা নবী করীম (স) সর্বদা বিতির নামাজ শেষ রাতে আদায় করতেন।

নামাজের হারাম মাকরূহ আওকাত


সূর্যোদয় ও সূর্যাস্তকালে এবং ঠিক দ্বিপ্রহরে যখন সূর্য মাথার উপর থাকে এ তিন সময় নামাজ পড়া হারাম এবং এ সময়গুলোতে তেরাওয়াতে সেজদা ও আদায় করা অবৈধ। সুবহে সাদিকের পর হতে সূর্য উদিত হওয়া পর্যন্ত ফজরের দু রাকাত সুন্নত ব্যতীত অন্য সকল নামাজ আদায় করা মাকরূহ।

আছর নামাজের পর সূর্যাস্ত পর্যন্ত অন্য যে কোন নামাজ আদায় করা মাকরূহ।

জুমা, ঈদ, হজ্জা ইত্যাদির খুৎবা আরম্ভ হয়ে যাওয়ার পর অন্য কোন নামাজ আদায় করা মাকরূহ। এমনকি খুত্তার ইমাম সাহেব দাঁড়িয়ে গেলেও অন্য কোন নামাজ আদায় করা যাবে না। ঈদের দিন ঈদের নামাজের পূর্বে অন্য কোন নফল নামাজ আদায় করা মাকরূহ।

পাঁচ ওয়াক্ত নামাজের রাকাত সময়হন পাঁচ ওয়াক্ত নামাজে মোট সতের রাকাত নামাজ ফরজ। কিন্তু এ সতের রাকাত নামাজ ছাড়া প্রতি ওয়াক্তে আর সুন্নত নামাজ রয়েছে। তার বিস্তারিত বিবরণ নিম্নে প্রদত্ত হল।


জোহরের নামাজ : প্রথমে চার রাকাত সুন্নত এর পর চার রাকাত ফরজ এরপর দুই রাকাত সুন্নত, মোট দশ রাকাত। এরপরও দু রাকাত নফল নামাজ পড়া যেতে পারে।

আছরের নামাজ : আছর নামাজের পূর্বে চার রাকাত সুন্নতে গায়রে মুয়াক্কাদাহ্, এরপর চার রাকাত ফরজ। মোট আট রাকাত।

মাগরিবের নামাজ: প্রথমে তিন রাকাত ফরজ, এরপর দু রাকাত সুন্নত। মোট পাঁচ রাকাত।

ইশার নামাজ : প্রথমে চার রাকাত সুন্নতে গায়রে, মুয়াক্কাদাহ, এরপর চার রাকাত ফরজ, এরপর দু রাকাত সুন্নত, এরপর তিন রাকাত বিতিরের ওয়াজিব। মোট তের রাকাত।


 



 
Tags:

Post a Comment

0Comments

Post a Comment (0)